আশঙ্কা ছিলই, ফ্লুয়ের সিজ়ন এলে করোনা-সংক্রমণ বাড়বে। কিন্তু তারও আগে দ্বিতীয় সংক্রমণ-ঢেউ আছড়ে পড়েছে ইউরোপে। বরং কিছু দেশে সংক্রমণ হার আগের বারের থেকেও বেশি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘‘বিপদঘণ্টি বেজে গিয়েছে।’’
ইউরোপের দেশগুলোতে এক-এক জায়গায় উপচে পড়ছে আইসিইউয়ের শয্যা। এ সপ্তাহে মাদ্রিদে জরুরি অবস্থা জারি করেছে স্পেন প্রশাসন। অন্যান্য অঞ্চলেও কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। হটস্পট চিহ্নিত করার জন্য সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে জার্মান সরকার। ইটালি নতুন করে নির্দেশিকা জারি করেছে, বাড়ির বাইরে বেরোলে মাস্ক পরতেই হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রথম কোনও অতিমারিতে ইউরোপের ভরকেন্দ্র ইটালি। হাসপাতালে রোগীর ভিড় এতটাই, যে সামলাতে গিয়ে বেহাল দশা স্বাস্থ্য পরিষেবার। রোমে এ সপ্তাহে দেখা গিয়েছে, উপসর্গ নিয়ে করোনা-পরীক্ষা করাতে এসে রোগীকে ৭-৮ ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্যারিস ও কিয়েভে দুর্বিসহ অবস্থা চিকিৎসক-স্বাস্থ্য কর্মীদের। রোগীর ভিড়ে গিজগিজ করছে ওয়ার্ড, এ দিকে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা হাতেগোণা।
জুন মাসে ‘ফেয়ারওয়েল কোভিড’ পার্টি করেছিল চেক প্রজাতন্ত্র। চার্লস ব্রিজের কাছে ৫০০ মিটার জায়গায় হাজার খানেক প্রাগবাসী করোনা-মুক্তির আনন্দে উৎসব করেছিলেন। সেখানে এখন ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্রে মাথাপিছু সংক্রমণ হার সব চেয়ে বেশি। ১ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে ৩৯৮ জন সংক্রমিত।
স্পেনের এক বিশেষজ্ঞ মার্গারিটা ডেল ভাল আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘যথেষ্ট সতর্ক করা হয়েছিল। সংক্রমণ আটকানোর সময়ও ছিল হাতে। কিন্তু তা করা হয়নি। গরমে শুরু হওয়া সংক্রমণই সামলানো গেল না, নতুন সংক্রমণ-ঢেউ এসে হাজির।’’
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় আজ জানিয়েছে, দৈনিক মাথাপিছু সংক্রমণ হার এখন আমেরিকার থেকে বেশি বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ব্রিটেন, স্পেন ও ফ্রান্সে। সম্প্রতি ফ্রান্স প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথমবারের থেকেও দৈনিক সংক্রমণ এখন বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ইউরোপ-অফিসের অধিকর্তা রব বাটলার বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ হাজার সংক্রমিত। ইউরোপে এটা রেকর্ড।’’ ‘লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন’-এর বিশেষজ্ঞ মার্টিন ম্যাকি বলেন, ‘‘চিন্তার বিষয় এটাই যে এখনও ইউরোপের অনেক দেশে যথেষ্ট করোনা-পরীক্ষা হচ্ছে না। আক্রান্তকে চিহ্নিত করা, তাঁকে কোয়রান্টিনে রাখার মতো পরিকাঠামোরও অভাব রয়েছে।’’
0 Comments